নবম পে স্কেল -২০২৫
নবম পে স্কেল বা জাতীয় পে স্কেল বিশেষ করে সরকারী কর্মচারীদের জন্য খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। পূর্ববর্তী পে স্কেলগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ৫ বছর অন্তর অন্তর পূর্বের পে স্কেলগুলো জারি হয়েছে। ২০১৫ সালের পরে চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত ৯ বছর চলমান। কিন্তু, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও সরকারের সদ্ব্যচিন্তার অভাবে এখনও পর্যন্ত নবম পে স্কেল জারি করা হয় নি।
নবম পে স্কেল বাস্তবায়ন করাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদ। বেতন বৈষম্য নিরসনসহ সাত দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদ। পে-কমিশন গঠন করে বৈষম্যমুক্ত নবম পে স্কেল বাস্তবায়ন।পে-স্কেল বাস্তবায়ন এর পরে বাস্তবায়নের আগে অন্তবর্তীকালীন ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার দাবি রয়েছে ৭ দফায়। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১৫ জানুয়ারী থেকে ৮ বিভাগে ধারাবাহিকভাবে মহাসমাবেশ করা হবে। এ ছাড়া ২৮ জানুয়ারি রাজধানীতে গণকর্মচারী মহাসমাবেশের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণ। বেতন স্কেল নির্ধারণে পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে। সচিবলায়ের মতো সব দপ্তর, অধিদপ্তরের পদ ও পদবি পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে। টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনর্বহালসহ বিদ্যমান গ্র্যাচ্যুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। পেনশন গ্র্যাচ্যুইটি ১ টাকা সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করে ওই পদ্ধতিতে নিয়োগ করা ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে।
আরও পড়ুন-স্থায়ী পে-কমিশন গঠন এবং ২৫ দফা দাবি সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
তারা বলেন, বাজারমূল্যের উর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে সব ভাতা পুননির্ধারণ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে। ব্লক পোস্টের কর্মচারীসহ সব পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ১০ বছর পরপর উচ্চতর গ্রেড দিতে হবে।
নবম পে স্কেলের সর্বশেষ খবর
সাত দফা দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে যাবে সরকারী কর্মচারীরা। নবম পে-স্কেল ঘোষণা, অভিন্ন নিয়োগবিধি চালু, আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল, পূর্বের ন্যায় টাইমস্কেল-সিলেকশন গ্রেড পূনর্বহাল বিনা সুদে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান, চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স বাড়ানোসহ ৭ দফা দাবি পূরণে আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা।
পে-স্কেল কেন জারি করা অতি জরুরি?
করোনাকাল অতিবাহিত হওয়ারপর বিশ্ব বাজার মন্দা দেখা দিয়েছে। দেশের বাজারে পন্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। তাছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি রপ্তানিতে বিশ্বব বাজার সহ আমাদের দেশেও ভাটা পড়ার মতো অবস্থা। চলতি অর্থ বছরেও দেশের বাজারে মূল্যস্ফিতি ৬.১৮ ছাড়িয়েছে। প্রতিবছর ৫% হারে সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। সে হিসাবে দেখা যাবে যে, প্রতি বছর যে হারে মূল্যস্ফিতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় সেই হারে বেতন বৃদ্ধি হয়না। তাই দ্রব্য মূল্যের সাথে বেতন ভাতাদি এখন সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাছাড়া চলতি বছর দ্রব্যমূল্য ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই নবম পে স্কেল জারি করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বছর কি পে স্কেল জারি হওয়ার আশা করা যায়?
সোজা কথা হচ্ছে এ বছর আর পে স্কেল জারি হবে না। শুধু তাই নয়, বাজেট পেশ শেষ যেখানে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার বাজেট পর্যন্ত রাখা হয়নি। তাই এ বছর মহার্ঘ ভাতাও পাওয়া যাবে না। দ্রব্যমূল্যের গতির সাথে বেতন ভাতাদি যদিও পেরে উঠছে না তবুও সরকারি কর্মচারিদের এ বছর আর মহার্ঘ ভাতা আশা করা যায় না। কিন্তু মহার্ঘ ভাতা যদি প্রদান করা না হয় নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীগণ ধার দেনায় ডুবে যাবে।
যেহারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতার উপর একটি মহার্ঘ ভাতা বা অন্য কোন সুযোগ সুবিধার ঘোষণা আসতে পারে। সেটি পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। এখনও পর্যন্ত সরকার ব্যয় সংকোচন করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মহার্ঘ ভাতা ২০২২ । এটি পে স্কেল অন্তবর্তীকালীন সময়ে প্রদান করা হয়।
নতুন পে স্কেল কবে হবে ২০২৫
নবম পে স্কেল ২০২৪ আপতদৃষ্টিতে হবে না মনে হচ্ছে। সরকারের আলোচনা ও দৃষ্টি ভঙ্গি এমনটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই নতুন পে স্কেল ২০২৪ না বলে ২০২৫ বলাই উত্তম। ১৯৭৩ সাল হতে পে স্কেল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ২০২০ সালেই পে স্কেল ঘোষণা করা উচিৎ ছিল। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনা করে পে স্কেল দেয়া হয়নি। বর্তমান ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির লাগাম কোন ভাবে টেনে ধরা যাচ্ছে না। তাই এ বছর প্রয়োজন হলেও সরকারি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন পে স্কেল জারি করবে না এই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু মহার্ঘ ভাতা ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জীবন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নাজেহাল। আন্তবর্তী সরকার সরকারী কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখে ২০২৫ সালে মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৬ পর্যন্ত মূল বেতন স্কেলের ২০%, গ্রেড-৭ থেকে গ্রেড-১০ পর্যন্ত মূল বেতন স্কেলের ২৫% এবং গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০ পর্যন্ত মূল বেতন স্কেলের ৩৫%।
নবম পে স্কেল বেতন কাঠামো-২০২৫
সরকারি কর্মচারীগণ জাতীয় পে স্কেল মোতাবেক বার্ষিক প্রায় ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বেতন বৃদ্ধির ধাপগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। মোট কথা বাজারে মূল্যস্ফিতির সাথে বেতন বৃদ্ধির সমন্বয় হচ্ছে না। গত ৬ বছরে ৩০% বেতন বৃদ্ধি হলেও মূল্যস্ফিতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০-৬০%। এ বছরের আরও ৫০% মূল্য বৃদ্ধি যোগ করা যেতে পারে শুধুমাত্র জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে। তাহলে ৭ বছরে মূল্য বৃদ্ধি ২ দ্বিগুন থেকে তিনগুন পর্যন্ত ঠেকেছে। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে নবম পে স্কেল ঘোষণাসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ন্যূনতম মহার্ঘ ভাতা ছাড়া কর্মচারীদের জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সবশেষে বলা যায়, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মহার্ঘ ভাতা এবং বেতন ভাতা বৃদ্ধি হোক। যাতে বর্তমান বাজার মূল্য এর সাথে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সামঞ্জস্য থাকুক। এমনকি সাধারণ জনগণ ও এই তালে তাল মিলিয়ে চলতে পারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি হ্রাস পাক এবং সব জনজীবন এর যেন ক্ষতি না হোক।