প্রাচীনকাল থেকে অর্জুন গাছের উপকারিতা রয়েছে অনেক। চলুন জেনে নেওয়া যাক অর্জুন গাছের পরিচিতি, উপকারিতা ও অপকারিতা।
প্রচলিত নামঃ অর্জুন
ইংরেজি নামঃ Arjuna
গোত্রঃ Combretaceae
বৈজ্ঞানিক নামঃ Terminalia Arjuna

অর্জুন গাছের পরিচিতি
অর্জুন মাঝারি আকারের পাতাঝরা পত্রমোচী বৃহৎ বৃক্ষ। কান্ড মসৃণ, মৃদু বাদামি কিংবা সবুজাভ ধূসর। পাতা সে,৩-৬ ইঞ্চি লম্বা, ডিম্বাকৃতি, চামড়ার মতো, প্রায় স্থূলকোণী, মসৃণ এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। পুষ্পমঞ্জরি উৎক্ষিপ্ত, বহু পৌষ্পিক, প্রআন্তইক, খাটো এবং অনিয়ত। ফুল অতি ক্ষুদ্র ,অনাকর্ষী, খাটো এবং ঘনবদ্ধ,রং গাঢ় বেগুনি।
এপ্রিল -মে মাসে ফুল ধরে। বৃত্যংশ ৫ টি, প্রআয় মসৃণ। ফল ডিম্বাকৃতি, কাঠের মতো কঠিন, শুষ্ক এবং ৫টি শিরবিশিষ্ট। ফল দেখতে কামরাঙ্গার মতো। শীতের শেষেই সাধারণত গাছ নিষ্পত্র হয়ে যায় এবং বসন্তে নতুন পাতায় গাছ ভরে যায়। নতুন পাতা গজানোর সময়েই গাছের শাখাগুলো পুষ্পমজ্ঞরিতে ভরে ওঠে। বীজ ও কলম দিয়ে চারা উৎপাদন করা যায়। ভেষজ গুণ দেশজ গাছগুলোর মধ্যে অর্জুনের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
অর্জুন হৃদরোগ, রক্ত আমাশয়,উচ্চ রক্তচাপ, উদরাময়, অর্শরোগ, জ্বর নিবারক হিসেবে কাজ করে। অর্জুন খাদ্য হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং খোস-পাচড়া ভালো করে। ব্যবহার অর্জুন গাছের বাকল, ফল ও পাতা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কাঠ নৌকা, নৌকার দাঁড়, গরুর গাড়ির তাকাতে ব্যবহৃত হয়। ঔষধি গুণ হিসেবে এর রয়েছে বহু ব্যবহার। নিচে ব্যবহার গুলো তুলে ধরা হলো।
অর্জুন গাছের উপকারিতা
- অর্জুন গাছের উপকারিতার মধ্যে যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ হাই ব্লাডপ্রেসার নেই, তাদের জন্য অর্জুন বাকল কাঁচা হলে ১০-১২গ্রাম আর শুকনো হলে ৫-৬ গ্রাম একটু থেঁতো করে, ১২৫ মিলিমিটার দুধ আর আধা লিটার পানি একসঙ্গে সেদ্ধ করে, আন্দাজ ১২৫ মিলিমিটার থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে বিকালের দিকে খেতে হবে। তবে গরম অবস্থায় সেদ্ধ দুধটা ছেঁকে রাখা ভালো। এর দ্বারা বুক ধড়ফড়ানি কমবে। পেটে যেন বায়ু না হয় সেদিকে ও লক্ষ রাখতে হবে। অর্জুনের বাকল এ পদ্ধতিতে সেবন করলে নিম্ন রক্তচাপ ও স্বাভাবিক হবে। প্রাচীন বঐদ্যরআ বাকলের গুঁড়ো বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে সেটা কমপক্ষে ৭ বার শুকিয়ে রেখে দিতেন।
- দমকা কাঁশির রোগীকে এর সঙ্গে একটু ঘি ও মধু বা মিছরির গুঁড়ো মিশিয়ে চাটতে দিলে কাশির উপদ্রব কমে যাবে।
- ৪-৫ গ্রাম অর্জুন বাকলের ক্বাথে ছাগলের দুধ মিশিয়ে সেবন করালে রক্ত আমাশয় উপশম হয়।
- অর্জুন গাছের উপকারিতা হলো শরীরের কোথাও মচকে গেলে কিংবা হাড়ে চিড় খেলে অর্জুন বাকল ও রসুন বেটে অল্প গরম করে ওখানে লাগিয়ে বেঁধে রাখলে সেরে যায়।তবে সেই সঙ্গে অর্জুন বাকলের চূর্ণ ২-৩ গ্রাম মাত্রায় আধা চামচ ঘি ও সিকি কাপ দুধ মিশিয়ে অথবা শুধু দুধ মিশিয়ে খেলে আরো ভালো হয়।
- অর্জুন ফলের শুকনো টুকরো কলকে করে তামাকের মতো ধোঁয়া টানলে হাঁপানির টান কমে যায়।
- অর্জুন বাকল মিহি করে গুড়ো করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মুখের মেছতায় লাগালে মেছতার দাগ চলে যায়।
- শরীরের কোথাও ফোড়া হলে অর্জুনের পাতা দিয়ে ঢাকা দিলে ফোড়া ফেটে যায়,তারপর তাতে পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
- কোনো কারণে প্রস্রাব বন্ধ হলে অর্জুন গাছের ক্বাথ পান করালে প্রস্রাব হয়ে যায়।
- অর্জুন গাছের উপকারিতা হলো যক্ষারোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অর্জুন গাছের ছাল রোদে শুকিয়ে মিহি করে গুঁড়ো করে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেঁকে বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে আবার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। ৬-৭ বার করতে হবে। এবার ওই গুঁড়া ৩ গ্রাম মতো ২ চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে খেতে দিতে হবে। দীর্ঘদিন এটা খেতে হবে। এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলতে হবে।
আরও পড়ুন- অন্তমোড়া ভেষজ গুণ
অর্জুন গাছের অপকারিতা
- গর্ভবতী মহিলাদের অর্জুন গাছের ছাল ক্ষতি করে। গর্ভবতী মহিলাদের অর্জুন গাছের ছাল বা বাকল ব্যবহার করা যাবে না।
- ডায়েবেটিস রোগীদের সতর্কতার সাথে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা দরকার। চিবকৎসকের পরামর্শ মেনে ব্যবহার করুন।