আকন্দ গাছ হলো মুকুট ফুল। Calotropis এর একটি প্রজাতি যা কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন, পাকিস্তান এবং নেপালে জন্মে থাকে১। এটি একটি বড় গুল্ম যা ৪ মিটার (১৩ ফুট) লম্বা হয়। এটিতে মোমযুক্ত ফুলের গুচ্ছ রয়েছে যা হয় সাদা বা ল্যাভেন্ডার রঙের। প্রতিটি ফুলে পাঁচটি বিন্দুযুক্ত পাপড়ি এবং কেন্দ্র থেকে উঠে আসা একটি ছোট “মুকুট” থাকে যা পুংকেশরকে ধারণ করে। ক্যালোট্রপিসে যে অ্যাস্টিভেশন পাওয়া যায় তা হল ভালভেট অর্থাৎ একটি ঘূর্ণায়মান সিপ্যাল বা পাপড়ি ওভারল্যাপিং ছাড়াই প্রান্তে একে অপরকে স্পর্শ করে। গাছে ডিম্বাকৃতি, হালকা সবুজ পাতা এবং দুধের কান্ড রয়েছে। আকন্দ গাছের-এর ল্যাটেক্সে কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে।
- প্রচলিত নাম: অকন্দ
- ইংরেজি নাম: Swallow Wort, Milk Wood, Crown Flower
- গোত্র: Asclepiadaceae
- বৈজ্ঞানিক নাম: Calotropis gigantea R. Br.

আকন্দ গাছ পরিচিতি
আকন্দ একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ। আকন্দ মাঝারি ধরনের ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদ। ৮ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের ছাল ধূসর বর্ণের এবং কাণ্ড শক্ত ও কচি ডাল লোমযুক্ত। পাতা ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা, উপরিভাগ মসৃণ এবং নিচের দিক তুলোর মতো। ক্ষুদ্র বৃন্ত এবং বৃন্তদেশ হৃৎপিন্ডাকৃত। গাছের পাতা শাখা বাঙলে দুধের মতো সাদা আঠা বের হয়। সাদা বা বেগুনি বর্ণের ফুল হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আকন্দ জন্মে। বীজ থেকে বংশ বিস্তর সম্ভব হলেও সাধারণত এর মোথা ও সাকার অংশ থেকে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। অকন্দের ফুল, পাতা, শেকড় ও আঠা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আকন্দের পাতা ও গাছের কষ বিষাক্ত। কষ ভীষণ রেচক, গর্ভপাতক, শিশু হন্তারক, পাতা মানুষ হন্তারক বিষ। আকন্দ দুই ধরনের হয়ে থাকে। বড় আকন্দ ও ছোট আকন্দ।
আকন্দ গাছের ভেষজ গুণ
অকন্দ চুলের রোগ, ব্যথা এবং বিষনাশে বিশেষ কার্যকরী। দাদ, দাঁত ব্যথা, টাকপড়া নিবারক ও কৃমিনাশক। অকন্দ বাত-বেদনা নিবারক ও ফোলা অপসারক।
আকন্দ গাছের ব্যবহার
আকন্দ পাতা ও হলুদের তৈরি বড়ি শোথ/ফোলা/পান্ডু রোগনাশক এবং রস কৃমিনাশক। এটি বায়ুনাশক, পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক, উদ্দীপক, পাচক, বিষনাশক, ফোলা নিবারক। দাদ, শোথ, অর্শ, ক্রিমি ও শ্বাসকষ্টে উপকারী। ব্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুকে কফ, খোসপাচড়া, একজিমায় আকন্দের পাতা, কাণ্ড ও মূলের ব্যবহার হয়ে তাকে। আকন্দ গাছের ফুল বহুমূত্ররোগ এর জন্যে বিশেষ উপকারী১ মানা হয়।
- আকন্দের কষ তুলায় ভিজিয়ে লাগালে দাঁত ব্যথা দূর হয় এবং যোনিতে ধারণ করলে গর্ভপাত ঘটে।
- এসিডিটি দেখা দিয়ে ০.৬৫ গ্রাম পরিমাণ আকন্দ পোড়া ছাই পানিসহ পান করলে সঙ্গে সঙ্গে উপকার পাওয়া যায়।
- পেট কামড়ানি বা পেট জ্বালায় আকন্দ পাতার সোজা দিকে সরিষার তেল মেখে পাতাটি অল্প গরম করে পেটের উপর রাখলে বা ছেঁক দিলে পেট কামড়ানো বা পেট জ্বালা বন্ধ হয়।
- শোথ/ফোলা রোগে আকন্দ বিশেষ উপকারী। ফোলাজনিত কারণে কোনো স্থান ফুলে উঠলে আকন্দ পাতা বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
- শ্বাসকষ্টে আকন্দের শিকড়ের ছাল প্রথমে গুঁড়া করে তারপর আকন্দের আঠায় ভিজিয়ে রেখে পরে শুকিয়ে চুরুট বানিয়ে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট ভালো হয়।
- নিউমোনিয়াজনিত বেদনায় অকন্দ পাতার সোজা দিক ঘি মেখে ব্যথার জায়গায় বসিয়ে লবণের পুঁটলি দিয়ে ছেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
- হজম শক্তি কমে গেলে ২ গ্রাম পরিমাণ শুকনো আকন্দ মূল গুঁড়া করে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।