এনোফিলিস জাতের মশার কামড়ে এই রোগ হয়। এই মশা একজন ম্যালেরিয়া রোগীকে কামড়ে অন্য একজন সুস্থ মানুষকে কামড়ালে সে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
ম্যালেরিয়া রোগ কি ঃ
ম্যালেরিয়া রোগ একটি ভীষণ কমন রোগ। এখন প্রায় ঘরে ঘরে ম্যালেরিয়া জ্বর হতে দেখা যায়। আমরা সবাই জানি মশার কামড় থেকে এই রোগ হয় এবং ছড়ায়। এজন্য সবচেয়ে আগে মশার জন্ম যাতে না হয় এবং মশা যাতে না কামড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখবেন, ম্যালেরিয়ার মশা কিন্তু নোংরা জলে নয় পরিষ্কার জলেই জন্মে। এজন্য জল ঢাকা দিয়ে রাখবেন।
একটা সময় পর্যন্ত মনে করা হতো নোংরা এবং অপরিষ্কার এলাকায় বা পরিবেশে যারা বসবাস করে তাদেরেই হয়। কিন্তু এখন সে চিত্র পাল্টে গেছে। এই জ্বর এখন শহরাঞ্চলের অভিজাত এলাকায়ও সমানভাবে হচ্ছে।

চার ধরনের ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণসমূহ
সাধারণতঃ দেখা গেছে চার ধরনের ম্যালেরিয়াতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। রোগের অবস্থা ও প্রকোপের ওপর এই ভাগ করা হয়। লক্ষণ দেখে এই জ্বরের ধরন ঠিক করা হয়। সাধারণ ম্যালেরিয় নিয়ে খুন একটা চিন্তার কিছু থাকে না। এই জ্বরের হঠাৎ শীত করে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, খানিকক্ষণ থাকে তারপর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়।
চার ধরনের ম্যালেরিয়ার মধ্যে প্রথম ধরনের ম্যালেরিয়াতে শীত করে, কাঁপুনি দিয়ে ঠিক সেই সময় জ্বর আসে যে সময়ে আগের দিন এসেছিল। দ্বিতীয় প্রকারের ম্যালেরিয়াতে একদিন বা দু’দিন অন্তর ঠিক সেই সময়ে জ্বর আসে, এক-দু’দিন আগে যে সময়ে এসেছিল।
এই দুই ধরনের ম্যালেরিয়া জ্বরেই তুলনামূলকভাবে হালকা প্রকৃতির। বাকি দুই ধরনের ম্যালেরিয়া একটু জটিল বলে মনে করা হয়।
তৃতীয় ধরনের জ্বরে সংক্রমণ বেশি হয় এবং জ্বর এলে তা দু’দিন পর পর লেগে থাকে তারপর অর্থাৎ তৃতীয় দিনে ছেড়ে যায় আবার চতুর্থ দিনে এসে দু’দিন থাকে।
চতুর্থ ধরনের ম্যালেরিয়া জ্বর হয় অত্যধিক সংক্রমণের ফলে। এই অবস্থাকে বেশ জটিল মনে করা হয়। একে সেরেব্রাল (cerebral) ম্যালেরিয়া বলে।
জ্বর যেমনই হোক যদি বারে বারে আসে বা দীর্ঘক্ষণ থাকে, কাঁপুনি দেয়, শীত করে তাহলে তা ম্যালেরিয়া মনে করে রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। ম্যালেরিয়া জানা গেলে তা চিকিৎসায় সেরে যায়। তবে মশা থেকে সাবধানে থাকতে হবে। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতৈ হবে।
ম্যালেরিয়া জ্বরের লক্ষণ
লক্ষণ ঃ ম্যালেরিয়া জ্বর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আসে। শীত করে, কাঁপুনি দেয়। গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এগুলি বিশেষ লক্ষণ। এছাড়া হজমের গোলযোগ দেখা যায়। শরীর দুর্বল অনুভূত হয়। ক্লান্তি লাগে। এ সময়ে খিদে কমে যায়। তাই এ সময়ে হালকা ধরনের খাদ্যই দিতে হয়। বিশেষ করে তরল খাদ্য। কারণ এ সময়ে পাচনতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে হজমের কাজ ঠিকমত হয় না। শক্ত বা গুরুপাক খাদ্য বর্জন করা উচিত।
রোগীকে আলোবাতাসযুক্ত ঘরে বিশ্রামে রাখতে হয়।
ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা
এই রোগেরও বিভিন্ন ঘরোয়া চিকিৎসা আছে। নিয়ম করে করলে উপকার পাওয়া যায়।
ম্যালেরিয়া রোগের ঘরোয়া প্রতিকারের উপায়
(১) ঠান্ডা জলে স্পঞ্জ করা এবং মাথায় জলপটি দেওয়া অবশ্যই দরকার। জ্বর বেশি থাকলে এতে কমে যায়
(২) বেশি করে ফলের রস, বিশেষ করে বেদানা এবং কমলার (বা মুসাম্বি) রস খেতে দিন।
(৩) ফোটা ফিটকিরি গুঁড়োর সঙ্গে চারগুণ মিছরি বা চিনির গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন ২ বার করে ২ গ্লাস ঈষদোষ্ণ জলের সঙ্গে সেবন করতে দিন। সাধারণতঃ তিনবার খেলে জ্বর চলে যায়। যদি জ্বর তাতেও না যায় তাহলে ২-৩ বার আরও মিশ্রণ খেতে দিন। ২-৩ দিন অন্তর যে ম্যালেরিয়া জ্বর হয় তাতে এই ওষুধ অত্যন্ত কার্যকরী। এমনকি কুইনাইনের চেয়েও ভাল কাজ দেয় বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। এর খুসকি জাতীয় কোনো পার্শ্ব-পতিক্রিয়াও নেই। তবে গর্ভবতীদের দেবেন না।
(৪) তুলসি পাতা ফুটিয়ে তার সঙ্গে গোলমরিচ গুঁড়ো ও চিনি মিশিয়ে সেবন করতে দিলেও এই জ্বরে উপকার পাওয়া যায়। এই তুলসি-গোলমরিচ মিশ্রিত গরম জল চায়ের মতো ধীরে ধীরে পান করলে ভালো। অন্ততঃ পাঁচ মিনিট ধরে। দিনে অন্ততঃ ৩-৪ বার পান করার পরামর্শ দিন।
(৫) ম্যালেরিয়া জ্বরে মধু খুব উপকারী এবং সহজপাচ্য। মশু বলবর্ধকও বটে। বার্লির মধ্যে মধু মিশিয়ে খেলে তা সহজে হয় এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থকে বাইরে বের করে দেয়।
(৬) আপেলও ম্যালেরিয়া জ্বরে খুবই উপকারী। আপেল ভারি খাবারের কাজ তো করেই তাছাড়া শরীরকে দুর্বল না করে জ্বর ভালো করে। আপেল সেবনে বারবার আসা ম্যালেরিয়া জ্বরের আক্রমণ প্রতিহত হয়।
(৭) সাতটি তুলসি পাতা, সাতটি গোলমরিচ একসঙ্গে চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। দিনে ৩ বার খাওয়ার পরামর্শ দেবেন। এইসঙ্গে দিনে ২-৩ বার তুলসির কচি পাতা চিবিয়ে খেতে পারলে আরও ভালো। এতে ম্যালেরিয়া বা পুরনো জ্বর মূল থেকে নষ্ট হয়।
(৮) ৬০ গ্রাম তুলসির (কালো তুলসি) পাতা এবং ৬০ গ্রাম গোলমরিচ একেসঙ্গে মিশিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা ধরে শিলে পিষে জল মিশিয়ে ১ গ্রামের ৩টি গুলি তৈরি করে সকাল, দুপুর ও রাতে খেতে দিন। খাওয়ার পর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর আসার আগে ১টি গুলি খেতে দিলেও ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়।
(৯) কুটকিকে খুব মিহি করে গুঁড়ো করে ১/২ গ্রাম বাতাসার মধ্যে দিয়ে পরিমাণ মত জল সহ জ্বর আসার আগেই রোগীকে খেতে দিন। এতে ম্যালেরিয়া, সর্দিজ্বর কমে যায়। জ্বর এলে গরম জলের সঙ্গে দিনে ২-৩ বার খেতে দিলে ঘাম দিয়ে জ্বর কমে যাবে। প্রয়োজনে কুটকির গুঁড়োর সঙ্গে সম পরিমাণ চিবি মিশিয়েও খেতে দিতে পারেন। দিনে ২ বার ২ গ্রাম মাত্রায় টাটকা জলের সঙ্গে সেব করতে দেবেন। দেকা গেছে ৩ দিনের মধ্যে যে কোনও ধরনের ম্যালেরিয়া প্রশমিত হয়।
(১০) ৩-৪টি তুলসি পাতা রোজ সকালে চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।