গরুর মাংসের বিভিন্ন রেসিপি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রবন্ধে। রান্না এখন আর নিছক রান্না নয়। বিশ্বব্যাপী রান্না এখন একটি স্বীকৃত শিল্প। রান্না-বান্নায় বাঙালিরাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বাঙালিরা একটু ভোজনবিলাসী, নানারকম রান্না করে খাওয়া বাঙালিদের অভ্যেস। রান্নার পেছনে বাঙালিরা যতোটা সময় দেন, ততোটা সময় বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ দেন না। বাঙালিরা পছন্দ করে অনেক পদের রান্না। তার মধ্যে গরুর মাংস অনেকের কাছে অতি প্রিয় একটা খাবার। বাঙালির রান্নায় অনেক প্রকারের গরুর মাংসের রেসিপি রয়েছে। তার মধ্যে কিছু রেসিপি বাসায় রান্না করে দেখতে পারেন-
১. গরুর মাংস ঝুরা

উপকরণ: গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কাটা (মোটা করে) দেড় কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা আধা চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো আধা চা চামচ, ধনে গুঁড়ো আধা চা চামচ, মরিচ গুঁড়ো আধা চা চামচ, জিরা গুঁড়ো আধা চা চামচ, ধনেপাতা কুচি পরিমাণমত, কাঁচামরিচ ফালি করে ৪/৫টা, দারুচিনি ২ টুকরো, এলাচি ২টি, লবণ স্বাদমত, তেল পরিমাণমত।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে আদা-রসুন বাটা, লবণ দিয়ে মাংস সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ মাংস ঝুরা করে নিতে হবে। এরপর অন্য একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি ও অন্যান্য সব মসলা দিয়ে দিতে হবে। মসলা কষানো হলে ঝুরা মাংস দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। এভাবে ১০ মিনিট নেড়ে কাঁচামরিচ ফালি, ধনেপাতা কুচি ও জিরা গুঁড়ো দিয়ে নেড়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
২. ফুলকপি গরুর মাংস

উপকরণ: একটি আস্ত ফুল কপি, মাংসে কিমা গরু/মুরগির ৫০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল ১০০ গ্রাম, আদা রসুন বাটা ২ চা চামচ, ১ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়ো, জিরা ভাজা গুঁড়া আধা চা চামচ, অল্প চিনি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ ৫/৬টা, গোল মরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, টেস্টিং সল্ট আধা চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে বড় একটা ফুল কপি পিছনের ডাটাটা কেটে আস্ত হালকা সিদ্ধ লবণ লবণ দিয়ে। এখন কিমা ধুয়ে তাতে আদা রসুন বা গোল মরিচ, ধনিয়া, জিরা, গুঁড়ো, পেঁয়াজ অল্প লবণ, টেস্টিং সল্ট দিয়ে মাংসগুলো সিদ্ধ করে ঠান্ডা হলে আরো পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিজ কুচি দিয়ে মাখিয়ে পুর তৈরি করে তা ফুল কপির ভিতরে পিছন দিক দিয়ে সমস্ত ফুল কপিকে মাংসের পুর দিয়ে ভরে দিতে হবে। এখন ওভেনে ১৫/২০ মিনিট বেক করলে তা ভাজা হয়ে যাবে। একটি ছুড়ি দিয়ে চাক করে কেটে পোলাওর সাথে পরিবেশন করুন।
৩. কাঁঠাল-মাংস

উপকরণ: কাঁচা কাঁঠাল আধা কেজি, গরুর মাংস আধা কেজি, মরিচ গুঁড়ো ১ চামচ, হলুদ আধা চা চামচ, ধনে গুঁড়ো আধা চা চামচ, আদা-রসুন বাটা ২ চা চামচ, কাঁচামরিচ ৩-৪টি, গুড়ো করে দারুচিনি + এলাচি + জিরা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি, লবণ ও তেল পরিমাণমত।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে কাঁঠাল টুকরাগুলো সামান্য হলুদ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। পেঁয়াজ বেরেস্তা করে রেখে দিন। কড়াইতে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি দিন। পেঁয়াজ বাদামি রঙের হয়ে এলে তাতে মরিচ-হলুদ-ধনে গুঁড়ো ও আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন। মসলা কষনো হলে গরুর মাংস ঢেলে দিন। মাংস কষানো হয়ে এলে দারুচিনি, এলাচি-জিরা গুঁড়ো দিয়ে দিন। এরপর কষানো মাংসে সিদ্ধ করা কাঁঠাল ঢেলে দিয়ে ভালোভাবে নাড়ুন। নামানোর ৫ মিনিট আগে কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। সবশেষে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। এবার সুন্দর বাটিতে ঢেলে পরিবেশন করুন মজার কাঁঠাল-মাংস।
৪. গরুর ভুঁড়ি ভুনা

উপকরণ: গরুর ভুঁড়ি ১ কেজি, নারিকেলের দুধ ২ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুন বাটা ২ চা চামচ, আদা বাটা ২ চা চামচ, জিরা বাটা ২ চা চামচ, বড় এলাচ ৩-৪টা, দারুচিনি ২ টা, তেজপাতা ২-৩টা, কাঁচামরিচ ৩-৪টা, মরিচগুঁড়ো ১ চা চামচ, তেল ১ কাপ, হলুদ সিকি চা চামচ, লবণ স্বাদমত।
প্রস্তুত প্রণালি: গরুর ভুঁড়ি প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নিন, এক সাইজে টুকরো টুকরো করে কেটে নিন। এরপর পাত্রে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে তা নরম হলে একে একে সব উপকরণ দিয়ে নাড়ুন এবং লবণ স্বাদমত দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন। তারপর ভুঁড়িগুলো দিয়ে নাড়াচাড়ার পর নারিকেলের দুধ দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর নারিকেলে দুধ শুকিয়ে গেলে তাতে কাঁচামরিচ ৩-৪ টা দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। সকালে নাস্তায় পরোটার সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৫. গরুর মাংসের ঝাল ঝাল কলিজা

উপকরণ: গরুর কলিজা ১ কেজি, টমেটো ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, আদা বাদা ১ চা-চামচ, রসুন কোয়া ৪-৫টি, লবণ পরিমাণমত, গুঁড়ো মরিচ আধা চা-চামচ, গরম মসলা গুঁড়ো আধা চা-চামচ, তেল/ঘি সিকি কাপ, ওয়েস্টার সস ২ চা-চামচ, ধনে পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো আধা চা-চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে কলিজা ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিন। টমেটো কিউব করে কেটে নিন। এবার চুলায় পাত্র দিয়ে তেল অথবা ঘি গরম দিন। তেল গরম হলে তাতে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি, গরম মসলা, আদা বাটা, রসুন কোয়া, লবণ, গুঁড়ো মরিচ, হলুদ গুঁড়ো, গোলমরিচ গুঁড়ো সামান্য পানি দিয়ে কষিয়ে তাতে কলিজাগুলো দিয়ে দিন। ১০ মিনিট কষনো হলে পানি দিয়ে সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। পানি শুকিয়ে এলে কিউব কাটা টমেটো, ওয়েস্টার সস, ধনেপাতা কুচি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন। মাখা মাখা হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
৬. গরুর মাংসের আমেরিকান চাপ
উপকরণ: গরুর সামনের মাংস ৫০০ গ্রাম। আদা বাটা দেড় চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, গোলমরিচের গুঁড়ো আধা চা চামচ, জায়ফল জৈত্রিক বাটা আধা চা চামচ, গরম মসলা বাটা আধা চা চামচ, লবণ পরিমাণমত, সয়া সস ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ টমেটো, শসা। তেল অল্প।
প্রস্তুত প্রণালি: গরুর রানের দিকে আলাদাভাবে একটা মোটা হয়ে সরু মতো মাসুলের মাংস আছে। ওই মাংস ঈদের সময় পেলে আলাদা করে রাখলে ভালো হয়। তা থেকে পাতলা গোল গোল করে মাংস ছুড়ি দিয়ে কেটে নিতে হবে। মাংস ধুয়ে লবণ, সয়া সস, সব রকম উপকরণ দিয়ে ২০-২৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ফ্রাইপ্যানে অল্প অল্প তেল দিয়ে পাতলা চাপগুলো ভেজে ভেজে তুলবেন। পরে টমেটো, পেঁয়াজ ও শশা গোল করে কেটে বড় প্লেটে সুন্দরভাবে সাজিয়ে টেবিলে পরিবেশন করুন।
৭. কিটিয়া কাবাব
উপকরণ: গরুর মাংসের কিমা এক কেজি, বুটের ডাল এক পোয়া বা ২৫০ গ্রাম, জায়ফল, জৈত্রিক বাটা দুই চা-চামচ, শুকনো মরিচ ৬-৭টি, পুদিনা পাতা কুচি দুই টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি এক বাটি, আদা দেড় চা চামচ, রসুন দেড় চা চামচ, লবণ পরিমাণমত, ডিম ৪টা, বিস্কুটের গুঁড়ো এক বাটি, এলাচি ৫-৬টি, দারুচিনি ৫-৬ টুকরো, তেল আধা কেজি।
প্রস্তুত প্রণালি: বুটের ডাল ধুয়ে মাংসের কিমায় দিন। সেই সঙ্গে সব রকম মসলা ও পরিমাণমত লবণ এক গ্লাস পানিসহ প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে বেটে নিতে হবে। এরপর পেঁয়াজ কুচি, পুদিনা কুচি, কাঁচামরিচ কুচি, ডিম দু’টি দিয়ে মেখে যে কোনো সাইজের কাবাব তৈরি করতে হবে। কাবাব ডিমে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়োয় গড়িয়ে তেলে বাদামি করে ভেজে পরিবেশন করুন।
৮. গরুর মাংস-বাঁধাকপি
উপকরণ: বাঁধাকপি মাঝারি আকারের ১টি, গরুর মাংস ১ কেজি, মরিচ গুঁড়ো ২ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়ো ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ বাটা-রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়ো ১ চা-চামচ, গরম মসলা (দারুচিনি, এলাচ ও গোলমরিচ) ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ আস্ত ৪-৫টি, সয়াবিন তেল ও পানি পরিমাণমত, লবণ স্বাদমত।
প্রস্তুত প্রণালি: বাঁধাকপি কেটে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। চুলায় পাত্র দিয়ে প্রথমে তেল দিন, এরপর পেঁয়াজকুচি বাদামি রঙে ভেজে এতে জিরা গুঁড়ো বাদে সব মসলা দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে মাংস দিন। মাংস সিদ্ধ হয়ে এলে তাতে বাঁধাকপি দিন। রান্না হয়ে এলে কিছুক্ষণ দমে রেখে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৯. মগজ ভুনা
উপকরণ: গরুর মগজ ১টি, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, কাঁচামরিচ ৪/৫টি, তেল টেবিল চামচ, সাদা গোলমরিচ আধা চা চামচ, লবণ পরিমাণমত, হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, চিনি সামান্য, গুঁড়ো মরিচ ১ চা-চামচ, দারুচিনি-এলাচ গুঁড়ো আধা চা-চামচ, ওয়েস্টার সস ২ চা-চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে গরুর মগজ ভালো করে ধুয়ে গোলিমরিচ গুঁড়ো, হলুদ, মরিচ, ওয়েস্টার সস, দারুচিনি-এলাচ গুঁড়ো মাখিয়ে ১ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখুন। চুলায় পাত্র দিয়ে তাতে তেল গরম দিন। এবার পেঁয়াজ কুচি, লবণ, ওয়েস্টার সস দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে তাতে মেরিনেট করা মগজ দিয়ে দিন। তেল দিয়ে ভাজুন। মাখা হয়ে এলে চিনি দিয়ে নামিয়ে নিন। সার্ভিং ডিশে ঢেলে পরিবেশন করুন।
১০. ওলকপি মাংস
উপকরণ: ওলকপি ৫০০ গ্রাম, গরুর মাংস ১ কেজি, সরিষা বাটা আধা কাপ, ধনেপাতা কুচি ১ কাপ, আদা বাটা দুই চা চামচ, রসুন বাটা ২ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, মরিচের গুঁড়ো ১ চা চামচ। কাঁচামরিচ ৩-৪ টা, তেল এক কাপ, হলুদ সিকি চামচ, লবণ স্বাদমত, পানি সামান্য। এলাচ ৪ টা, দারুচিনি ৪টা। জিরা টালা ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: ওলকপি ছোট ছোট করে কেটে নিন। মাংস ছোট আকারে কেটে নিন, তারপর ওলকপিগুলো সিকি চা চামচ লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। পাত্রে তেল গরম করে উপরের সব উপকরণ দিয়ে ভেজে নিন। মাংস দিয়ে নেড়ে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন। পানি কমে গেলে ওলকপি দিয়ে নেড়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন এবং গরম গিরম পরিবেশন করুন।
১১. পটলের দোলমা

উপকরণ:গরুর মাংসের কিমা আধা কেজি, পেঁয়াজ বাটা ৬/৭টা, রসুন বাটা এক চা চামচ, হলুদ বাটা আধা চা চামচ, মরিচ বাটা এক চা চামচ, জিরা বা এক চা চামচ, ধনে বাটা এক চা চামচ, গোলমরিচ বাটা সিকি চা চামচ, এলাচ ২টা, দারুচিনি ১ টুকরো, জয়ত্রী সিকি চা চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টা, তেল আধা কাপ, পটল বড় ৮ টা।
প্রস্তুত প্রণালি: পটলের দুইদিকের মুখ না কেটে চেঁছে নিন। পটল চিরে ভিতরের বীচি বের করুন। পেঁয়াজ ছাড়া কিমার সাথে অন্যান্য সব মসলা-আধা কাপ পানি এবং ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে চুলায় কষান। মাংস সিদ্ধ হলে পেঁয়াজ কাচা মরিজ ভাজুন। পানি শুকিয়ে তেল বের হলে নামিয়ে রাখুন। পটলে কিমা ভালোভাবে ভরুন। সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে পটলের চিরা অংশ বন্ধ করুন। কড়াইয়ে বাকি তেল দিন। কিমায় যে পরিমাণ মসলা দেয়া হয়েছে আবার সে পরিমাণ মসলা এবং পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মসলা কষান। পটল ও অল্প পানি দিয়ে ভাজুন। পটল সিদ্ধ হলে নামিয়ে ফেলুন।