ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূণ। ওজন কমাতে ডায়েটের প্রসঙ্গ উঠলেই অনেকে বলে থাকেন, এত কম খান, সকালে নাস্তা খান না বা রাতে না খেয়ে থাকেন তারপরও মোটা হয়ে যাচ্ছে। এ জন্যে কী যে করবেন বুঝতেই পারছেন না।
আসলে খাবার না খেয়ে বা উপোস দিয়ে নয়, ওজন কমাতে হলে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে পেট ভরাতে হবে। ক্ষুধা পেলে না খেয়ে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। চর্বি জাতীয় খাবারে বা তেল, ঘি, মাখন, গরু ও খাসির মাংসে সবচেয়ে বেশি ক্যালোরি থাকে। ভিটামিন, মিনারেল এবং পানিতে কোনো ক্যালোরি নয়। এক চা চামচ ঘি, মাখন বা তেল থেকে যতটা ক্যালোরি পাওয়া যায়, তা এক বাটির সবজির সমান। কাজেই তেল নিযুক্ত খাবার না খেয়ে সবজি সেদ্ধ, সালাদ বা যে কোনো ফল খেলে পেট ভরবে, কিন্তু ওজন বাড়বে না। শাক-সবজি, ডাল এবং কড়াইশুঁটি জাতীয় সবজিতে ভিটামিন এবং শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে থাকে। এসব খাবারে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনও অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলে বেশি পরিমাণে এক ধরনের খাবার খেলে পেট ভরলেও বেশি ক্যালোরির জন্যে ওজন বেড়ে যাবার ভয় থাকে না।

ওজন কমাতে প্রথমেই সজাগ থাকতে হবে খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কে। নিয়ম মেনে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। শরীর সচেতন হয়েও অনেক সময় আমরা ঘরোয়া আড্ডা বা টিভি দেখতে বসে কিংবা বই পড়তে পড়তে মেপে খাবার কথা ভুলে যায়। ইচ্ছেমতো চিপস, চানাচুর, সিঙ্গাড়া বা অন্য কোনো মুখরোচক খাবার খেয়ে ফেলি। এসব খাবার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। বরং এ সময়ে শসা, গাজর, পেয়ারা বা ঋতুকালীন অন্যান্যা ফল, অল্প পরিমাণ মুড়ি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। মুখরোচক করার জন্যে মুড়ি, ছোলা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ দিয়ে মাখিয়ে নেয়া যায়।
ওজন কমানোর উপায় ডায়েট
ওজন কমানোর উপায় হলো শরীরের ক্ষতি না করে ওজন কমাতে স্যুপের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। লাঞ্চ বা ডিনারের আগে হালকা ধরনের স্যুপ খেলে পেট কিছুটা ভরা থাকে। ফলে বেশি করে ভাত খাবার প্রবণতা কমে যায়। ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ সবজি যেমন-বাঁধাকপি, বিন, গাজর, বিট, ফুলকপি ডাল ইত্যাদি দিয়ে বা শসার স্যুপে অল্প পাতি লেবু এবং গোলমরিচ দিয়ে খেলে শরীরের ভিটামিনের প্রয়োজন মেটে, কিন্তু ক্যালরি বেশি না থাকায় ওজন বাড়ে না। তবে ধরনের স্যুপে কখনোই ক্রিম, ঘি, মাখন দেয়া উচিত নয় বা কর্ন ফ্লাওয়ার, এরারুট, ময়দা বা আলুসেদ্ধ দিয়ে ঘন করাও ঠিক নয়। এতে বরং হিতে বিপরীত হবার আশংকা বেশি।
আরও পড়ুন- উচ্চ রক্তচাপে করণীয়: কারণগুলি, প্রতিকার এবং চিকিৎসা
যাদের একটু মোটার ধাঁচ তাঁদের বিয়ে বাড়ি, পার্টি বা দাওয়াত খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো। মাসে একবারের বেশি এরকম খাবার খাওয়া ঠিক নয়। তবে যাদের ওজন স্বাভাবিক তাঁরা সপ্তাহে একদিন খেতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি দাওয়াত খাওয়ার পর দু-তিন দিন একটু হালকা খাবার খাওয়া যায়।
ওজন সহজে বাড়লেও কমাতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়। এখানে তিন মাসে বরো কেজি ওজন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো। প্রথম দু-তিন মাস ওজন কমানো সহজ হলেও পরের দিকে একটু সমস্যাই হয়ে পড়ে। তবে ধৈর্যকারে নিয়স্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও সকাল-সন্ধে হাঁটাহাঁটি করে ওজন আয়ত্তে আনা যায়। একই সঙ্গে ব্যায়াম ও খাওয়া কমানো উচিত নয়।
ওজন কমাতে চান? মনস্থির করে প্রথম দু’প্তাহ নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করুন। এই সময় প্রায় দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন কমানো যায়। এরপর শুরু করুন সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা। প্রথম দিকে দশ মিনিট হাঁটুন। পরের দিকে আধ ঘণ্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর্যন্ত হাঁটা যেতে পারে।
প্রথম মাসে শরীরের ক্ষতি না করে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে চার থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব। দ্বিতীয় মাসে দুই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব। দ্বিতীয় মাসে দুই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত কমানো যায়। তৃতীয় মাসে এক কেজি। অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে আট থেকে বারো কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যেতে পারে নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে।
পরের দিকে এভাবে দ্রুত হারে ওজন কমানো না গেলেও পে, কোমর ও উরুর মাপ কমানো যায়। এই সময় স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়ার অর্ধেক পরিমাণ খাওয়া উচিত। মধ্যাহ্ন ভোজন ও রাতে দু’বাটির পরিবর্তে এক বাটি ভাত, দুটির পরিবর্তে একটি রুটি খাওয়া উচিত। সাথে প্রচুর পরিমাণে সেদ্ধ সবজি ও স্যালাদ। ক্ষুধা পেলে শসা ও পাতলা ঘোল খাওয়া যেতে পারে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি শুরু না করাই ভালো। কারণ কম ক্যালোরি খাওয়া এবং একই সাথে অত্যধিক পরিশ্রম করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। খাওয়া নিয়ন্ত্রণের দুই সপ্তা পর মর্নিং ওয়াক শুরু করতে হবে। সকাল ও বিকেলে হাঁটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এক সেকেন্ডে দুটি করে স্টেপ পড়ে। ব্যায়াম দেহ সৌষ্ঠব ঠিক রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু ওজন কমানোর জন্য ডায়েটের পাশাপাশি হাঁটতেই হবে-হাঁটা ছাড়া ওজন কমানো কিছুতেই সম্ভব হয়। তবে ভরপেটে কখনোই হাঁটা উচিত নয়।