প্রচলিত নাম: আদা
ইংরেজি নাম: Ginger
গোত্র: Zingiberaceae
বৈজ্ঞানিক নাম: Zingiber Officinale
পরিচিতি
আদা হলো ভূনিম্নস্থ রূপান্তরিত কান্ড যা রাইজোম বা কন্দ নামে পরিচিত। ভূনিম্নস্থ কান্ড বহুবর্ষজীবী। বায়বীয় কান্ড বর্ষজীবী এবং পত্রময়, যা ৩ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা বেশ লম্বা ও গাঢ় সবুজ রঙের। আদা বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে নিলে তাকে শুঁট বলা হয়। বিভিন্ন ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচা ও শুঁট উভয়ই ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও পার্বত্য জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে আদা চাষ হয়ে থাকে। আদা বীজ রোপণের প্রায় ৭-৮ মাস পর ফসল পরিপক্ব হয়। আদা এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাস পর্যন্ত রোপণ করা হয়। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করা হয়।

পুষ্টিমান
আদা উৎকৃষ্ট ভেষজ গুণসম্পন্ন মসলা জাতীয় ফসল। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। শুকনা আদায় শতকরা ৫০ ভাগ শর্করা, ৮.৬ ভাগ আমিষ, ৫.৯ ভাগ আঁশ, ১২.৩ ভাগ শ্বেতসার, ১.২ ভাগ খনিজ পদার্থ, ৮০.৮ ভাগ পানি, ০.১ ভাগ ক্যালসিয়াম, ১.৪ ভাগ পটাশিয়াম রয়েছে। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম আদায় ১৭৫ গ্রাম ভিটামিন এ এবং ৩৮০ ক্যালোরি খাদ্যশক্তি আছে।
আরও পড়ুন- আঙুর খাওয়ার উপকারিতা, ভেষজ গুণ এবং ব্যবহার
ভেষজ গুণ
মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। বিভিন্ন গবেষণায় নানা রোগ প্রতিরোধে আদার শক্তিশালী কার্যকর ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে। এক গবেষণায় জানা গেছে, আদা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করে। মূলত রক্তে অধিক মাত্রার কোলেস্টেরলের উপস্থিতি হৃদরোগ সৃষ্টির বিভিন্ন কারণের মধ্যে বিশেষ একটি। গবেষকদের মতে আদায় রয়েছে রক্ত জমাটবিরোধী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা রক্তনালির ভেতরের রক্ত জমাটে বাধা দান করে। এ ছাড়াও আদা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হৃগরোগ প্রতিরোধ সহজ হয়।
আদার প্রধান উপকারিতা হলো, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আদা পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তি বাড়ায়। এটি হজমকারক, বায়ুনাশক, অগ্নিবর্ধক, স্বর পরিষ্কারক। আদা চা ক্লান্তি দূর করে। এটি শরীরে উষ্ণতা বাড়ায়। ফলে যাদের পিও সমস্যা আছে তাদের এটি কম খাওয়া উচিত। সুতরাং আদার গুণ ভোলার নয়।
ব্যবহার
- শুঁটের ক্বাথ গরম গরম পান করলে হৃদরোগ ও কাশি ভালো হয়ে যায়।
- গরম পানিতে শুঁট চূর্ণ মিশিয়ে কপালে দিলে শিরপীড়ায় উপকার হয়।
- রেড়ির তেলের সাথে আদার রস মিশিয়ে খেলে জোলাপের কাজ করে।
- পীতপুষ্প, বেড়েলার মূল্যের ছালের শুঁট সমানভাবে নিয়ে ক্বাথ তৈরি করে ২-৩ দিন পান করলে শীত ও কম্পদাহ সমন্বিত বিষম জ্বর দূর হয়।
- রসুন ও মধুর সাথে শুঁটের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশিতে উপকার পাওয়া যায়।
- গরুর দুধের সাথে নস্যি গ্রহণ করলে তীব্র শিরোবেদনার উপশম হয়।
- পুরনো দুধের সাথে আদার রস মিশ্রিত করে খেলে শীত-পিত্ত রোগে উপকার পাওয়া যায়।
- তিল তৈল ও আদার রসে কিছু মধু ও সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে সামান্য গরম থাকতে বিন্দু বিন্দু করে কানের ভেতরে দিলে কর্ণশূল অর্থাৎ কানের ব্যথা দূর হয়।
- বেল শুঁট ও শুণ্ঠীর ক্বাথ পান করলে বমন ও বিসূচিকা প্রশমিত হয়।
- মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা শুকিয়ে চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় আদা চিবিয়ে বা রস করে খেলে রোগমুক্তি ঘটে।
- এক গ্রাম পরিমাণ শুকনো আদার গুঁড়া হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে বহু দিনের পুরনো আমাশয় সেরে যায়।
- আধা কাপ হালকা গরম পানতে ২ চামচ কাঁচা আদার রস মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট মুখে রাখতে হবে। এভাবে দিনে দু’বার করে তিন দিন প্রয়োগ করলে মাড়ি ফুলা এবং যন্ত্রণা দুই-ই কমে।
- শরীরের কোথায় কেটে গিয়ে যদি রক্তপাত বন্ধ না হয় তবে খানিকটা শুকনো আদার গুঁড়া নিয়ে কাটা স্থানে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয় এবং তাড়াতাড়ি জোড়া লাগতে সাহায্য করে।
- সর্দি লেগে যদি নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং সঙ্গে জ্বর জ্বর ভাব থাকে তাহলে ২ চা চামচ মধুর সঙ্গে ১ চা চামচ আদার রস মিশিয়ে দিনে দু’বার দু’দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- ১ চা চামচ কাঁচা আদার রসের সঙ্গে সমপরিমাণ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে বসন্তের গুঁটি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়।
- দুপুরে খাবার আগে সৈন্ধব লবণ দিয়ে একটু আদা চিবিয়ে খেলে ক্ষুধা বাড়ে এবং মুখের রুচিও ফিরে আসে।