ধুতরা গাছের ফল এবং ফুলের অনেক উপকারিতা রয়েছে আবার অপকারিতাও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক। ধুতরা গাছের পরিচিতি, উপকারিতা, গুণাগুণ এবং অপকারিতা।
- প্রচলিত নাম: ধুতুরা, ধুতরা, ঘণ্টা ফুল
- ইংরেজি নাম: Thorn-apple
- গোত্র: Solanaceae
- বৈজ্ঞানিক নাম: Datura metel Linn.

ধুতরা গাছের পরিচিতি
ধুতরা ফুল হিন্দুদের শিব পূজায় লাগে। ধুতুরা ঘন পাতাবিশিষ্ট গুল্ম। উচ্চতায় দেড় মিটার পর্যন্ত হয়। পাতা প্রজাতিভেদে হৃৎপিণ্ডাকৃতি, ত্রিকোনাকার বা পঞ্চকোণবিশিষ্ট। পাতার অগ্রভাগ ক্রমশ সরু। সাদা লম্বা ফুল হয়। ফুল গোড়ার দিকে সরু, মাথার দিক চওড়া, অনেকটা কল্কের মতো। গাছ, পাতা, ফল সবই সবুজ রঙের। এর ফল কাঁটায় আবৃত থাকে।
ধুতুরা দুই প্রকার-১. সাদা ধুতুরা ও ২. কনক ধুতুরা। সাদা ধুতুরা প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। সাদা ধুতুরার ফুলের রং সাদা। কনক ধুতুরার রং বেগুনি। কনক ধুতুরা ফুলের মধ্যে আর একটি থাক দেখা যায়, মনে হয় যেন ফুলের অভ্যন্তরে আর একটি ফুল রয়েছে।
ধুতরা গাছের উপকারিতা
ধুতুরার পাতা, শেকড় ও বীজ কযায় মধুর তিক্ত রসযুক্ত, উষ্ণবীর্য সমন্বিত, জ্বর, কুষ্ঠ, ব্রণ, কণ্ডু, কফ, বিষ-বেদনা, বায়ুজনক, বর্ণ প্রসাদক, অগ্নিবর্ধক, মদকারক, মূত্রকারক, নিদ্রাজনক ও উকুননাশক।
ধুতরা গাছের ব্যবহার
ওষুধে ধুতুরার পাতা, শেকড় ও বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ধুতুরা বেশি পরিমাণ অর্থাৎ মাত্রায় বেশি সেবন করা উচিত নয়, কারণ এটি বিষাক্ত। ওষুধে কনক ধুতুরার ব্যবহার বেশি। কিন্তু কনক ধুতুরার অভাবে শ্বেত ধুতুরাও ব্যবহার করা চলে।
- ফুলা ও বেদনায় ধুতুরা পাতার রসের প্রলেপ দিলে বা ওই রস সেবন করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
- খুব জোরে শ্বাস বের হলে ধুতুরার ধূমপানে সুফল পাওয়া যায়।
- চোখের চারদিকে (অর্থাৎ বাইরে) ধুতুরার প্রলেপ দিলে চক্ষু তারা প্রসারিত হয়ে থাকে।
- দাঁত বা কানের গোড়া ফুলে গেলে এবং ঠাণ্ডা লেগে গলা ফুলে গেলে ধুতুরা পাতার রসে কিঞ্চিৎ আফিম মিশিয়ে বেদনাযুক্ত স্থানে লাগালে অবিলম্বে বেদনা প্রশমিত হয়ে যায়।
- ফোড়া হলে ধুতুরা পাতার রসের সাথে গরুর ঘি মিশিয়ে ফোড়ার চারদিকে প্রলেপ দিলে ফোড়া সত্বর পেকে ফেটে যায়।
- ধুতুরা পাতার রসের সাথে অল্প পরিমাণে চুন ও হলুদ মিশিয়ে স্ত্রীলোকের স্তনে প্রলেপ দিলে স্তন বেদনা দূর হয়।
- অজীর্ণ রোগে ধুতুরার বীজ বিশেষ উপকারী। তিন দানা বীজ পিষে শ্বাসকষ্ট শিগগির প্রশমিত হয়। ঠাণ্ডা পানিসহ আহারের পর সেবন করলে ভুক্তদ্রব্য পরিপাক হয়ে থাকে।
- শুকনো ধুতুরার পাতা ও ডাঁটা চূর্ণ করে কন্ধেয় দিয়ে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট দ্রুত দূর হয়।
- ২ ফোঁটা পরিমাণ ধুতুরা পাতার রস ঘোলসহ মিশিয়ে সেবন করলে কৃমি বিনষ্ট হয়।
- ছোলা, মাষকলাই, মটর, মুগ ও যব ভক্ষণে অজীর্ণ হলে তিন দানা ধুতুরার বীজ পিষে শীতল পানিসহ সেবন করলে আহার্য দ্রব্য পরিপাক হয়।
- কৃষ্ণ ধুতুরার শুকনা পাতা এবং ফুল বাসক পাতায় জড়িয়ে সিগারেটের মতো তৈরি করে আগুন দিয়ে টানলে হাঁপানির কষ্ট কমে যায়।
- জীবাণুঘটিত কারণে মাথার চুল উঠে গিয়ে টাক পড়লে, ধুতুরা পাতার রস মাথার এক পাশে লাগিয়ে পরদিন অপর পাশে লাগাতে হবে। একদিন অন্তর ব্যবহার করলে টাক আরোগ্য হয়।
- বাতে খুব কষ্ট পেলে ধুতুরা পাতার রসের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে সামান্য গরম অবস্থায় বেদনা স্থানে মালিশ করলে বাতের বেদনা কমে যায়।
ধুতরা ফুলের উপকারিতা
- শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য এ গাছের পাতা, ফুল, ফল উপকারী।
- বাতের ব্যথা কমাতে এর পাতার রস সরিষার তেলের সাথে ব্যবহার করলে ব্যথা কমবে।
- টাক সমস্যা দূর করে।
- যোনিপথ শক্ত করে।
- যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে।
ধুতরা বীজের তেলের উপকারিতা
ধুতরো বীজ থেকে প্রক্রিয়াজাত তেল যাদের মাথায় টাক সমস্যা থাকে এই তেল ব্যবহার করলে ফের সেখানে চুল গজাবে। যাঁরা চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন, তাঁরাও এই তেল ব্যবহার করতে লাগাতে পারেন। খুশকির ক্ষেত্রেও এই তেল উপকারী।
আরও পড়ুন-অপরাজিতা গাছের উপকারিতা
ধুতরা গাছের অপকারিতা
ধুতরা গাছের অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু অপকারিতা রয়েছে। ধুতুরা গাছের পুরোটাই বিষাক্ত। এই গাছে রয়েছে Tropane Alkaloids নামক বিষ। ধুতরা গাছের বিষক্রিয়ার কারণে মানুষ বা পশুপাখির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সর্বশেষ, ধুতরা গাছের উপকারিতা এবং অপরিকারিতা রয়েছে। তাই এর গুণাগুণ এবং এর অপকারিতা জেনে ব্যবহার করা ভালো।