সন্তান প্রত্যেক বিবাহিত জীবনের একটি আধার । তাই, একজন পরিণত মহিলা-পুরুষ একযোগে প্রবেশ করতে উৎসুক হন। আর সামাজিক এবং সংসার জীবনে সন্তানের জন্ম বা বংশবৃদ্ধি একটা সহজাত ও স্বাভাবিক ক্রিয়া হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু, মাসিকের কত দিন পরে সহবাস করলে গর্ভে সন্তান আসে বা সন্তান ধারনের নিয়ম নিয়ে অনেকেই মনেই রয়েছে নানা কল্পনা।
ডা. ফাহমিদা সুলতানার মতে,
২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জন্মনিয়ন্ত্রণ দিবস। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে মানুষকে সচেতন করতে ২০০৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জেনে নেওয়া যাক, পিরিয়ডের সঙ্গে নিরাপদ সহবাসের (সেফ সেক্স) কোনো সম্পর্ক আছে কি না। সহবাসের পর স্পার্ম বা শুক্রাণু নারীর জরায়ুর ভেতর পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে ডা. ফাহমিদা সুলতানা জানান, স্পার্ম জরায়ুতে সাধারণত তিন দিনের বেশি টেকে না। ওই তিন দিনের যেকোনো এক দিন যদি ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপন্ন করে। সেই ডিম্বাণু ডিম্বনালির ভেতর দিয়ে জরায়ুতে পৌঁছে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। তখন এই নারী গর্ভবতী হয়। এখন প্রশ্ন হলো, মাসিকের কত দিন পর বা কখন ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপাদন করে।
পিরিয়ড হলে মনে করা হয় যে, ওই নারী ডিম্বাণু উৎপাদন করতে সক্ষম। তবে, ডা. ফাহমিদা সুলতানা যোগ করেন, এর ব্যতিক্রমও আছে। পিরিয়ড হয়েছে মানেই যে ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপাদন করেছে, এমনটা না-ও হতে পারে। সাধারণত ডিম্বাণু যতক্ষণে পরিপক্ব হয়, ততক্ষণে জরায়ু রাসায়নিক সংকেত পেয়ে ভেতরে একটা নরম, পুরু আবরণের সৃষ্টি করে। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। আর আবরণসহ সবটা ভেঙে গিয়ে পিরিয়ডের রক্ত আকারে বের হয়ে যায়।
সাধারণত দুবার পিরিয়ডের মাঝামাঝি সময়ে ডিম্বাণু পূর্ণাঙ্গ হয়। সাধারণভাবে পিরিয়ড শুরুর ১৪তম দিনে বা এর আশপাশের সময়ে ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপাদন করে। পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণু জরায়ুতে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তাই সেই সময়টা গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উর্বর। সাধারণভাবে ধরা হয়, পিরিয়ডের শুরুর দিন থেকে ধরলে ৯ থেকে ১৯তম দিনের মাঝে, অর্থাৎ এই ১০ দিনের যেকোনো দিন জরায়ুতে শুক্রাণু থাকলে নিষিক্ত হতে পারে। তবে কি এই ১০ দিন বাদে অন্য সময় যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা নিরাপদ?
উত্তর হলো, না, নিরাপদ নয়। তবে অন্য দিনগুলোতে কোনো সুরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া সহবাস করলে গর্ভবতী হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে পুরোপুরি নিরাপদ, এটা বলা যাবে না। কেননা, ডিম্বাশয় যে ৯ থেকে ১৯তম দিনের মাঝেই ডিম্বাণু উৎপাদন করবে, এমন কোনো কথা নেই। এটা নানা কারণে এগোতে বা পেছাতে পারে। ধরুন আপনি পিরিয়ডের শেষ দিকে সহবাস করেছেন, আর সেই মাসে ডিম্বাশয় আগে আগেই ডিম্বাণু উৎপাদন করেছে। আর শুক্রাণু তো পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকেই। সে ক্ষেত্রে নিষিক্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। টেনশন বা দুশ্চিন্তা, ডায়েট, ভারী শরীরচর্চা এগুলো ডিম্বাশয়কে ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা এড়াতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

ডা. তাসনিম জারার মতে,
গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় চেনার অনেকগুলো পদ্ধতি আছে। একাধিক পদ্ধতি একসাথে ব্যবহার করলে গর্ভধারণের সঠিক সময় জানা যেতে পারে। এই সময়ে সহবাসে দ্রুত গর্ভ ধারন সম্ভাবনা বাড়ে।
এই লেখায় গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময় নির্ণয় করার পদ্ধতিগুলো ও মাসিকের কতদিন পর সহবাস করলে সন্তান হয় — তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাচ্চা নেওয়ার জন্য কত বছর বয়স থেকে চেষ্টা করবেন সেটি জানতে সন্তান নেওয়ার সঠিক বয়স আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।
১. সাদা স্রাব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গর্ভধারণের সঠিক সময় জানা
এই পদ্ধতি কাদের জন্য প্রযোজ্য?
মাসিক নিয়মিত বা অনিয়মিত যেমনি হোক, সবাই সাদাস্রাবের এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে যাদের মাসিক অনিয়মিত, তাদের জন্য এটা খুব উপকারী। কারণ অন্যান্য পদ্ধতিতে তাদের গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময় বের করা একটু কঠিন।
সাদা স্রাব পর্যবেক্ষণের কতগুলো পদ্ধতি আমরা ব্যবহার করতে পারি?
প্রতি মাসে মেয়েদের সাদা স্রাবের চার রকমের অবস্থা দেখা যায়।
- প্রথম অবস্থা হচ্ছে মাসিকের ঠিক পরে যখন কোন সাদাস্রাব দেখা যায় না। মাসিকের রাস্তাটা খুব শুকনা শুকনা মনে হয়, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি (০.৩ শতাংশ)।
- এর পরের অবস্থায় মাসিকের রাস্তা হাল্কা ভেজা মনে হয়, কিন্তু আপনি চোখে কোন সাদাস্রাব দেখেন না বা হাতেও ধরতে পারেন না, তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে ১ শতাংশের একটু বেশি (১.৩ শতাংশ)।
- প্রথম এই দুই অবস্থা সবার মধ্যে দেখা যায় না। বিশেষ করে যাদের মাসিকের সাইকেল ছোট, তাদের ক্ষেত্রে এই দুইটি অবস্থা মাসিকের সময়েই হয়ে যেতে পারে।
- তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
- তৃতীয় অবস্থায় ঘন সাদাস্রাব যায়। সেটা আঙ্গুলের সাথে আঠালো হয়ে লেগে থাকে। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে ২.৫ শতাংশের কাছে চলে আসে।
- চতুর্থ অবস্থায় সাদাস্রাব খুব পাতলা এবং পিচ্ছিল হয়। কাচা ডিমের সাদা অংশ যেমন মসৃণ আর পিচ্ছিল হয়, কিছুটা তেমন। দেখতে স্বচ্ছ। আর সেই সাদাস্রাব দুই আঙ্গুল দিয়ে টেনে বড় করা যায়। কয়েক ইঞ্চি বড় করলেও ভাঙ্গে না। তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ২৮.৬ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে আসে।
- এই চতুর্থ অবস্থা শেষ হওয়ার পর আবার সাদাস্রাব ঘন আঠালো হয় বা একেবারেই আর কোন সাদাস্রাব যায় না। তবে অনেকের মাসিকের ঠিক আগে আগে আবার পাতলা সাদাস্রাব যেতে পারে, তবে সেটা গর্ভধারণের সাথে সম্পর্কিত নয়।
ছবি: চার ধরনের সাদাস্রাব কীভাবে চিনতে পারবেন?
এই পদ্ধতি কীভাবে কাজে লাগাবেন?
যেদিন থেকে সাদাস্রাব দেখছেন, সেদিন থেক শুরু করে শেষ যেদিন পাতলা পিচ্ছিল সাদাস্রাব যাবে সেদিন সহ, তার পরের ৩ দিন—এই সময়টা বাচ্চা নেয়ার জন্য চেষ্টা করার ভালো সময়।
সাদা স্রাবে পরিবর্তন আসে কেন?
কিছু কিছু কারণে সাদা স্রাবের পরিবর্তন আসে, ফলে এই পদ্ধতি কখনো কম কার্যকরী হতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে—
- সহবাস
- সহবাসের সময় লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারী কোন কিছু ব্যবহার করা
- কিছু ওষুধ
- শিশুকে বুকের দুধ পান করানো
- জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পিল সেবন করা
- জরাযুমুখের কোন অপারেশন
- যোনিপথের কোন ইনফেকশন
২. শরীরের তাপমাত্রা মেপে গর্ভধারণের সঠিক সময় জানা
দ্বিতীয় পদ্ধতিটা হলো শরীরের তাপমাত্রা মেপে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময় বোঝা।
তাপমাত্রা মাপার পদ্ধতি
মাসিকের পর পর শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হওয়ার পরে অর্থাৎ যখন ডিমটা ফোটে, তখন একজন নারীর শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যায়। না মাপলে এই পরিবর্তন সাধারণত বোঝা যায় না, কারণ এটি খুবই সামান্য, ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মত। কিন্তু আপনি প্রতিদিন শরীরের তাপমাত্রা মাপতে থাকলে, কখন এটি বেড়ে গেলো সেটা আপনি ধরতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে একটা রুল মনে রাখবেন, ছয়ের পরে তিন। টানা ৬ দিন কম তাপমাত্রার পরে টানা ৩ দিন বেশি তাপমাত্রা থাকতে হবে। কত বেশি হবে? কমপক্ষে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। একদিন তাপমাত্রা এসে সেটা আবার চলে গেলে তা হবে না। বিভিন্ন কারণে তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। একটানা বেশি তাপমাত্রা থাকতে শুরু হওয়ার পরে তৃতীয় দিন পর্যন্ত ফারটাইল উইন্ডো থাকে। এই বেশি তাপমাত্রা যতদিনই থাক, ধরে নিতে হবে তিন দিন পরে ফারটাইল উইন্ডো শেষ।
সঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপার নিয়ম
- কখন মাপবেন? ঘুম থেকে ওঠার পরে, কোন কিছু করার আগে, বিছানায় থাকা অবস্থাতেই তাপমাত্রা মাপতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে মাপার চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ নিয়মিত একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। বিছানার কাছেই থার্মোমিটার রাখবেন।
- কোথায় মাপতে হবে? আমরা অনেকেই বগলের নিচে তাপমাত্রা মাপি। এখানে সেটা করলে হবে না। মুখের তাপমাত্রা মাপতে হবে। থার্মোমিটার জিহ্বার নিচে রেখে মুখ বন্ধ করবেন।
- কোন ধরণের থার্মোমিটার ব্যবহার করতে হবে? জ্বর মাপার সাধারণ পারদ থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে এত সূক্ষ্ম পরিবর্তন বোঝা যায় না। ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করতে হবে। বিভিন্ন ফার্মেসিতে অল্প খরচেই এটি কিনতে পাওয়া যায়।
এই পদ্ধতিতে ফারটাইল উইন্ডো কখন শুরু হয় বোঝা যায় না, তবে কখন শেষ হচ্ছে সেটা বোঝা যায়।
এই পদ্ধতি কীভাবে কাজে লাগাবেন?
একটু আগে যে সাদা স্রাবের পদ্ধতি বুঝিয়েছিলাম সেটা ব্যবহার করে সাদাস্রাব যাওয়া যেদিন শুরু হয়েছে সেদিন থেকে গর্ভধারণের চেষ্টা শুরু করবেন, আর এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার তৃতীয় দিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তাহলে গর্ভধারণের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময়টুকু কাজে লাগানো হবে।
শরীরের তাপমাত্রা কখন পরিবর্তন হতে পারে?
মানসিক চাপে থাকলে বা ঘুম কম হলে শরীরের তাপমাত্রায় পরিবর্তন আসতে পারে। আবার শরীরের যেকোনো ধরনের অসুস্থতায় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা মেপে ফারটাইল উইন্ডো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে প্রতিদিনের তাপমাত্রা একটি চার্টে নোট করে রাখতে হবে। হঠাৎ তাপমাত্রা বাড়লে, এই বৃদ্ধির কারণ জানা থাকলে সেটিও সাথে নোট করে রাখতে পারেন।
৩. স্ট্যান্ডার্ড ডে পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করার উপায়
এই পদ্ধতি কাদের জন্য প্রযোজ্য?
এই পদ্ধতি আপনার জন্য কার্যকরী হবে যদি আপনার মাসিকের সাইকেল—
- কখনোই ২৬ দিনের চেয়ে ছোট না হয়
- কখনোই ৩২ দিনের চেয়ে বড় না হয়
স্ট্যান্ডার্ড ডে পদ্ধতি
এই পদ্ধতি অনুযায়ী মাসিক শুরু হওয়ার পর ৮ নাম্বার দিন থেকে ১৯ নাম্বার দিন পর্যন্ত আপনার ফারটাইল উইন্ডো বা সবচেয়ে সম্ভাবনাময় সময়। অর্থাৎ যদি ১ তারিখে মাসিক শুরু হয়, তাহলে ৮ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত সময়টাতে আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
মাসিকের সাইকেল কীভাবে হিসাব করবেন?
প্রথম যেদিন মাসিক হয় সেই তারিখটা ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখবেন। মাসিক কবে শেষ হল সেটা দাগানোর প্রয়োজন নেই। এর পরে আবার যেদিন মাসিক শুরু হবে, ক্যালেন্ডারে সেই তারিখটা দাগ দিবেন। এই দুইটা তারিখের মধ্যে যত দিনের পার্থক্য, সেটা আপনার মাসিকের সাইকেলের দৈর্ঘ্য।
মাসিকের সাইকেল হিসাব করার সময় সাধারণত ২টা ভুল দেখা যায়। মাসিক শেষ হওয়ার দিন থেকে অনেকে গোনা শুরু করেন। কিন্তু হিসাব করতে হবে যেদিন মাসিক শুরু হল সেই দিন থেকে। তারপর অনেকে পরের মাসিক শুরু হওয়ার দিনটাও গোনে। পরের মাসিক যেদিন শুরু হল, সেদিন থেকে নতুন সাইকেলের হিসাব করতে হবে।
ধরেন আপনার মাসিক শুরু হল ১ তারিখ, তারপর আবার মাসিক হল সেই মাসেরই ২৯ তারিখ। তাহলে ১ তারিখ থেকে সাইকেল শুরু হয়েছে, ২৮ তারিখে শেষ, ২৯ এ আবার নতুন সাইকেল শুরু। তাহলে এবার আপনার সাইকেল ছিল ২৮ দিনের।
এই পদ্ধতি কীভাবে কাজে লাগাবেন?
শুধুমাত্র এই পদ্ধতি ব্যবহার না করে সাথে অন্য পদ্ধতিও মিলিয়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। কারণ সবসময় যে এই ৮ নাম্বার থেকে ১৯ নাম্বার দিনের মধ্যেই ডিম্বাণু বের হবে, এমন নয়। এ জন্যই অন্য পদ্ধতিগুলোও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড ডে পদ্ধতির কার্যকারিতা বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে। যেমন—
- শিশুকে বুকের দুধ পান করানো
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল সেবন
- গর্ভধারণের ঠিক পরে
৪. ক্যালেন্ডারে হিসাব রেখে গর্ভধারণ করার উপায়
৪ নাম্বার পদ্ধতি একটু কষ্ট করে হিসেব করতে হলেও বেশ ভালো কাজ করে।
একটু আগেই আমরা দেখেছি কীভাবে মাসিকের সাইকেল হিসাব করতে হয়। এই নিয়মে অন্তত ছয় মাস ধরে মাসিকের হিসাব রাখতে হবে। এতে আপনি ৬-৭টা সাইকেলের দৈর্ঘ্য পেয়ে যাবেন। সবগুলোর দৈর্ঘ্য একই নাও হতে পারে। কোনটার আসবে ৩৩ দিন, কোনটার ২৬ দিন। ৬টা সাইকেলের দৈর্ঘ্য পাওয়ার পরে, এদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা আর সবচেয়ে ছোট সাইকেল দুটো বেছে নিতে হবে।
সবচেয়ে ছোট সাইকেল থেকে ১৮ বিয়োগ করলে যেই সংখ্যাটা পাবেন, আপনার সাইকেলের সেই দিন থেকে ফারটাইল উইন্ডোর শুরু। আর সবচেয়ে লম্বা সাইকেল থেকে ১১ বিয়োগ করলে যেই সংখ্যাটা আসবে, সেই দিন আপনার ফারটাইল উইন্ডোর এর শেষ দিন।
ধরা যাক, আপনার সবচেয়ে ছোট সাইকেল হচ্ছে ২৬ দিনের। এখান থেকে ১৮ বিয়োগ করলে হল ৮। অর্থাৎ আপনার সাইকেলের অষ্টম দিন থেকে ফারটাইল উইন্ডোর শুরু। এরপর ধরা যাক আপনার সবচেয়ে লম্বা সাইকেল হচ্ছে ৩৩ দিনের। ১১ বিয়োগ করলে হয় ২২। অর্থাৎ আপনার সাইকেলের ২২ তম দিন হচ্ছে শেষ দিন।
তাহলে মাসিক শুরু হওয়ার পরে ৮ নাম্বার দিন থেকে ২২ নাম্বার দিন হল আপনার ফারটাইল উইন্ডো। এর যে কোন এক দিন আপনার ওভারি থেকে ডিম্বাণু বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এই সময়টাতে সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৫. অন্যান্য পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করার উপায়
আরো অন্যান্য কিছু উপায় আছে। যেমন—
- বিভিন্ন ফার্মেসিতে ওভুলেশন টেস্ট কিট পাওয়া যায় যেগুলো কিছুটা প্রেগন্যান্সি টেস্টের মত। প্রস্রাবে হরমোনের লেভেল মেপে বলে দেয় কখন ডিম্বাণু বের হয়ে আসতে পারে। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন, তবে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
- মোবাইল ফোনে কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করে নেওয়া যায়। যেমন: Flo, Clue, Glow। মাসিকের তারিখ বসালে এগুলো ফারটাইল উইন্ডো হিসাব করে দেয়। তবে কোন অ্যাপই ১০০% নির্ভরযোগ্য না। এগুলো ব্যবহার করলে আপনার সাইকেলের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারেন।
- এছাড়াও ডিম্বাণু বের হওয়ার পরে স্তনে বা তলপেটে ব্যথা হতে পারে, পেট ফাঁপা লাগতে পারে। তবে এই লক্ষণগুলো ব্যবহার করে ফারটাইল উইন্ডো বের করা নির্ভরযোগ্য নয়।
পরিশেষে, সবার জরাযুতে ডিম্বানু একই সময়ে হয় না, আবার একই মানুষের ক্ষেত্রে মাসিক নিয়মিত হলেও একেক মাসে একেক সময়ে হতে পারে। তাই নিজের শরীরের লক্ষণগুলো (যেমন: তাপমাত্রা, সাদাস্রাব) এর দিকে খেয়াল রাখলে, আপনি সময়টা আরো ভালভাবে চিনতে পারবেন।
আরও পড়ুন- গর্ভাবস্থায় প্রথম ত্রৈমাসিক এর লক্ষণ, কী খাবেন এবং কোন খাবারগুলো পুষ্টিকর
যতগুলো পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে, এগুলোর কোনটাই ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়ে আসার সঠিক সময় নিশ্চিত করতে পারে না। তবে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে, বিশেষ করে কয়েকটা পদ্ধতি সমন্বয় করলে, সন্তানধারণের সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়।
মনে রাখতে হবে, ১দিন বা ২দিন পর পর সহবাস করলে ১ বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি দম্পতি সফল হন। অর্থাৎ ৩/৪ মাস চেষ্টা করে সফল না হলে ঘাবড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই। সময় লাগতে পারে। ১ বছর নিয়মিত চেষ্টা করার পরেও সফল না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নারীর বয়স যদি ৩৫ এর বেশি হয়, তাহলে ৬ মাস চেষ্টা করার পরেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।