ম্যালেরিয়া জ্বর প্রতিকারের ঘরোয়া উপায়
ম্যালেরিয়া জ্বরের অনেক ঘরোয়া উপায় রয়েছে। তার মধ্যে ম্যালেরিয়া জ্বরে ভাজা লবণও খুব ভালো কাজ দেয়। খাওয়ার সাদা লবণ চাটুতে দিয়ে বাদামী করে ভেজে নিন। তারপর ঠান্ডা করে একটা শিশিতে ভরে রাখুন। এই ভাজা লবণ শুধু ম্যালেরিয়া নয়, বিষম জ্বর (নিউমোনিয়া), পালা জ্বর ইত্যাদিতে অত্যান্ত ফলদায়ক। জ্বর আসার আগে এক টেবিল চামচ বা ৬ গ্রাম (বেশি হলে ক্ষতি নেই, কম না হয়) ভাজা লবণ এক গ্লাস ঠান্ডা জলে মিশিয়ে খেতে দিন। জ্বর কমে যাবে। পরে আর জ্বর আসবে না। দ্বিতীয় বার যদি জ্বর আসেও তাহলে এভাবেই খতে দিন। তৃতয়ি বার নিশ্চিত ভাবেই জ্বর আসবে না।

ম্যালেরিয়া জ্বরে নিষেধাজ্ঞা
অধিক উচ্চ রক্তচাপের রোগী এবং বৃদ্ধদের এই ভাজা লবণ না দেওয়াই ভালো, দিলেও খুব সাবধানে দিতে হবে।
এই ওষুধ খালিপেটে বেশি কাজ দেয় তাই রোগীকে দেওয়ার সময় তাকে অন্য কিছু খেতে নিষেধ করবেন। রোগীর যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন।
অত্যধিক পিপাসা পেলে অল্প করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করা জল দেবেন।
পেটে গ্যাস হলে কাঁচা হলুদ ১ গ্রাম এবং লবণ ১ গ্রাম মিশিয়ে গরম জলের সঙ্গে খেলে পেটের গ্যাস বেরিয়ে গিয়ে পেটের অস্বস্তি দূর হয়। পেট হাল্কা হয়।
ভাজা লবণের উপকারিতা এবং ভিন্ন ব্যবহারবিধি
কোনো কোনো আয়ুর্বেদিকের মতে এইভাবে চাটুতে বা লোহার কড়াইয়ে বাদামী করে ভাজা সাদা লবণ ছোটদের ১/২ চামচ এবং বড়দের ১ চামচ এ গ্লাস জলে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। লবণ যখন জলে ভালো করে গুলে যাবে তখন নামিয়ে অল্প-অল্প গরম থাকতে রোগীকে খেতে দিন। রোগীর যখন জ্বর থাকবে না তখন এই লবণ জল খেতে দেবেন। এর ফলে দেখা গেছে প্রায় ৯০% রোগীর জ্বর পরে আসে না। আর যদি জ্বর আসেও তাহলে এভাবেই লবণ জল দেবেন। পরে অর্থাৎ তৃতীয় বার আর জ্বর আসবে না। তবে রোগীকে ঠান্ডা থেকে সাবধানে রাখার পরামর্শ দেবেন।
বিদেশেও কেউ কেউ এভাবে ভাজা লবণের ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন।
ম্যালেরিয়া জ্বরের চিকিৎসা
পথ্যাদি ঃ জ্বরের সময়ে বা শুরুতে আগেই বলেছি ভাত জাতীয় শক্ত বা ভারি খাবার না দেওয়াই ভালো। তরল খাদ্য এবং ফল দেওয়া যেতে পারে। যেমন দুধ, চা, মুসম্বীর রস (বরফ না দিয়ে), ডালের জল, লেবুর জল, সফেদা, পেঁপে, আলু-বোখরা ইত্যাদি দেওয়া যায়। আয়ুর্বেদানুসারে রোগীকে আটা বা ময়দার কোনো খাবার, রুটি, পরোটা, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি জ্বরের সময় না দেওয়াই ভালো। মুগের ডালের জল, সাগুদানা, কিংবা ভাজা গমের আটার ঘোল রুচি অনুসারে আধ কাপ মাত্রায় দেওয়া যেতে পারে।
ম্যালেরিয়া রোগীর খাবার
গমের আটা খুব সামান্য পরিমাণ ঘি দিয়ে ভেজে তাতে জল দিয়ে পাতলা করে ভালো ভাবে নাড়তে হবে। যাতে গোটা না হয়ে যায় এবং ঘন হয়ে ভাতের মাড়ের মতো হয়ে যায়। পরে নামাবার আগে সামান্য পরিমাণ দুধ, চিনি বা শুধু চিনি বা শুধু লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। গমের এই বার্লি বা পটোলিয়া জ্বরে খুব উপাদেয় পানীয়।
জ্বর একটু কমলে গমের দালিয়া, আপেল, আঙুর, খিচুড়ি ইত্যাদি দিতে পারেন। জ্বরের সময় রোগীকে বেশি করে জল খেতে দেবেন। ফুটিয়ে ঠান্ডা করা জল বারবার অল্প-অল্প করে খেতে পরামর্শ দেবেন।
জ্বর একেবারে কমে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে শক্ত খাবার দেওেয়া শুরু করবেন। যেমন দু’একটা আটার রুটি, ভেন্ডি, পটল, সরুচালের নরম ভাত, মেথি বা বেথোর শাক, মুগ-মুসুরের ডাল, টম্যাটো ইত্যাদি। তবে কোনো খাবারই জ্বরের রোগী যেন পেট ভরে না খায়। বরং অল্প-অল্প করে বারে বারে খেতে দিন।
আগের দিন রাতে ৮-১০টি পুদিনা পাতা, ৮-১০টি মনাক্ক জলে ভিজিয়ে পরদিন ঐ জল ছেঁকে খেলে উপকার পাওয় যায়। উদর-বিকার, বদহজম মন্দাগ্নি ইত্যাদিতে ফলপ্রদ।
খিদে না থাকলে খাওয়ার কিছু আগে লবণ মিশিয়ে আদা কুচি, অল্প গোলমরিচের গুঁড়ো, বিট লবণ মিশিয়ে টম্যাটোর কুচি খেলে লাভ হয়। কিংবা ৪-৫টি মনাক্কার (বীজ বের করে নিয়ে) টুকরো ছেঁচে বা পিষে সামান্য বিট লবণ মিশিয়ে খাওয়ালেও উপকার পাওয়া যায়।
জ্বরের পরে বা জ্বর থেকে উঠে শরীর দুর্বল থাকে। এ সময়ে দুধের মধ্যে খেজুর (৪-৫টা) দিয়ে ফুটিয়ে খেতে বা ১-২ চামচ মধু দিয়ে দিনে ২-৩ বার খেলে শরীরে বল বৃদ্ধি হয়।
এছাড়া, জ্বর পুরোপুরি ছাড়া পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্রাম, শীতল খাবার, ঠান্ডা হাওয়া থেকে দূরে রাখা, মাথায় জলপটি (১০৩⁰-এর উপর জ্বর থাকলে) দেওয়া, স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া, ঘন-ঘন পিপাসা পেলে মৌরি ভেজানো জল অল্প অল্প করে সেবন ইত্যাদি প্রয়োজন। অনেকের দুধ এ সময়ে হজম হয় না। তেমন হলে দুধ গরম করার সময় কয়েক দানা মৌরি তাতে দিলে বা ১-২টি ছোট পিপল দিয়ে ফুটিয়ে নিলে হজমের সহায়ক হয়। ঠোঁট ফাটলে বা ঘনঘন শুকালে খুব মিহি করে জিরা বেটে ৪ ঘণ্টা অন্তর ঠোঁটে লেপন করলে উপকার পাওয়া যায়।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর আহারাদি ঃ জ্বর থেকে ওঠার পর রোগীর খিদে বাড়তে থাকে। এ সময়ে আস্তে আস্তে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া শুরু করতে হয়। তবে যেহেতু পাচনতন্ত্র দুর্বল থাকে তাই অল্প মাত্রায় ধীরে ধীরে খাবার বাড়াতে হয়। যবের দালিয়া, কমলা, মুসম্বি জাতীয় ফলের রস, লেবু দেওয়া আখের রস ইত্যাদি খাওয়ালে রোগী খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে। হজম শক্তিও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। রোগী কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে শক্ত খাবার দেবেন। শক্ত খাবার দেবার সময় বেশি করে সবজি দেবেন। তবে সবজি সেদ্ধ করে নিলে ভালো হয়। সব রকম সবজি মিলিয়ে সেদ্ধ করে সুপ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া পাতলা পাতলা গমের রুটি, আপেল ইত্যাদিও দেবেন।
গোড়ার দিকে তেলে ভাজা খাবার, মশলা দেওয়া খাবার, মিষ্ট, চা, কফি, অ্যালকোহল বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় ইত্যাদি যথাসম্ভব বর্জন করে চলা উচিত। এগুলো থেকে যত সাবধানে থাকবে ততই রোগীর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়বে। বার-বার জ্বর আসা বন্ধ হবে।